বাংলাদেশ এখন বিশ্বমঞ্চে এক নতুন পরিচয় গড়ছে—একটি উদ্যোক্তা-সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে। গ্রামীণ অর্থনীতির ক্ষুদ্র উদ্যোগ থেকে শহুরে স্টার্টআপ, নারী নেতৃত্বাধীন ব্যবসা থেকে প্রযুক্তি-ভিত্তিক উদ্ভাবন—সবক্ষেত্রেই উদ্যোক্তা সংস্কৃতি দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রযুক্তির সহজলভ্যতা এবং তরুণদের সৃজনশীলতা মিলে বাংলাদেশের উদ্যোক্তা খাতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।

তাওহিদুল ইসলাম,জবি
_ফাউন্ডার ও সিইও
হিদায়াহ ,বুকশপ
বাংলাদেশে উদ্যোক্তা সংস্কৃতির ইতিহাস
উদ্যোক্তার ধারণা বাংলাদেশে নতুন নয়। স্বাধীনতার পর কৃষি, হস্তশিল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও ট্রেডিং কার্যক্রম অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি ছিল। ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে তৈরি পোশাক শিল্পের উত্থান উদ্যোক্তা বিকাশের বড় উদাহরণ হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তথ্যপ্রযুক্তি, ই-কমার্স ও ফ্রিল্যান্সিং খাত নতুন উদ্যোক্তা প্রজন্ম তৈরি করেছে।
—
বর্তমান চিত্র ও অর্জন
স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম: শতাধিক প্রযুক্তি-ভিত্তিক স্টার্টআপ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে।
নারী উদ্যোক্তা: প্রায় ২৫% ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা নারীদের নেতৃত্বে।
সরকারি উদ্যোগ: SME ফাউন্ডেশন, স্টার্টআপ বাংলাদেশ, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর উদ্যোক্তা সহায়তায় কাজ করছে।
ই-কমার্সের প্রসার: দারাজ, চালডাল, খাদ্য ডটকমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম অনলাইন ব্যবসায় বিপ্লব ঘটিয়েছে।
—
উদ্যোক্তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ
1. পুঁজির অভাব – সহজ শর্তে ঋণ ও বিনিয়োগ পাওয়া কঠিন।
2. দক্ষতার ঘাটতি – ডিজিটাল মার্কেটিং, ই-কমার্স প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণের অভাব।
3. আইনগত জটিলতা – লাইসেন্স, ট্যাক্স ও রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল।
4. বাজারে প্রতিযোগিতা – আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার চাপ।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বাংলাদেশের তরুণ জনসংখ্যা, দ্রুত ইন্টারনেট বিস্তার ও বিশ্ববাজারের সঙ্গে সংযোগ উদ্যোক্তা খাতকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যেতে পারে। আগামী দশকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ উদ্যোক্তা-ভিত্তিক অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে।
–
নীতিগত সুপারিশ
সহজ ঋণ প্রাপ্তি ব্যবস্থা চালু।
ডিজিটাল দক্ষতা প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ।
ব্যবসা-বান্ধব স্টার্টআপ নীতি প্রণয়ন।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা।
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি।
“উদ্যোক্তা বাংলাদেশ” শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, বরং সামাজিক রূপান্তরের প্রতীক। সঠিক নীতি ও সহায়তা থাকলে বাংলাদেশ শিগগিরই বিশ্বে “উদ্যোক্তার দেশ” হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে, যা জাতীয় উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করবে।