ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৩০ অক্টোবর ২০২৫
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উদ্যোক্তা
  5. কৃষি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. গণমাধ্যম
  9. জাতীয়
  10. টপ৯
  11. দেশজুড়ে
  12. ধর্ম
  13. নারী ও শিশু
  14. পজিটিভ বাংলাদেশ
  15. প্রবাস
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঢাকা মশক নিবারণ দপ্তরের ক্ষমতাধর স্টোর কিপার গিয়াস উদ্দিন: দুর্নীতি, রাজনীতি আর টাকার খেলায় পঙ্গু দপ্তর

NNTV desk
অক্টোবর ৩০, ২০২৫ ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

 

ঢাকা মশক নিবারণীয় দপ্তর নগরবাসীর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এই দপ্তরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ এখন ভয়, দুর্নীতি আর রাজনৈতিক প্রভাবের ঘেরাটোপে। এই বিশৃঙ্খলার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন দপ্তরের বর্তমান স্টোর কিপার গিয়াস উদ্দিন, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, গিয়াস উদ্দিন সরকারি চাকরিতে থেকেই দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। বরিশাল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি দলীয় পদেও ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। সম্প্রতি তিনি আবার বিএনপির ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন, তবে অফিসে এখনো দেখান “লীগের দাপট”।

 

এক কর্মকর্তা বলেন, “গিয়াস উদ্দিন একসময় আওয়ামী লীগের পরিচয়ে চাকরি ও পদোন্নতি আদায় করতেন, এখন পরিস্থিতি বুঝে বিএনপির সাথে সখ্য গড়েছেন। দল বদলালেও দাপট কমেনি তিনি এখনো মনে করেন, অফিসটা তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি।”

 

দপ্তরে ভয় আর অনিয়মের রাজত্ব:

অফিসের বেশিরভাগ কর্মচারীই স্বল্পশিক্ষিত মশক কর্মী। এই সুযোগে গিয়াস উদ্দিন তাদের ভয়ভীতি ও হুমকির মধ্যে রেখে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, অফিসের সকল ফাইল, সরঞ্জাম ক্রয়, বিল-ভাউচার তৈরি সবই তার একক নিয়ন্ত্রণে চলে।

 

একজন কর্মচারী জানান, “তিনি যেভাবে বলেন, আমাদের সেভাবেই কাজ করতে হয়। কোনো প্রশ্ন করলেই বদলির ভয় দেখান। অফিসে যেন আমরা সবাই তার দাস।”

 

প্রমোশনের নামে অর্থ লেনদেন:

সবচেয়ে ভয়াবহ অভিযোগ হলো, গিয়াস উদ্দিন প্রমোশন বা চাকরি দেওয়ার নামে নিরীহ কর্মচারীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অনেক কর্মচারী চাকরি স্থায়ীকরণ বা পদোন্নতির আশায় তার কাছে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়েছেন বলে অভিযোগ।

 

একজন কর্মকর্তা বলেন, “তিনি বলেন ‘আমি উপরে কথা বলব, তোমার কাজ হয়ে যাবে।’ এরপর টাকা নেন, কিন্তু কাজ কিছুই হয় না। যারা টাকা ফেরত চান, তারা আবার তার শত্রু হয়ে যান।”

 

বিলাসী জীবন ও অবৈধ সম্পদ:

সরকারি চাকরিজীবী হয়েও গিয়াস উদ্দিনের বিলাসী জীবনযাপন এখন দপ্তরে আলোচনার বিষয়। তিনি বর্তমানে রয়েল এনফিল্ড মোটরবাইক (ঢাকা মেট্রো-ল ৬৬-২৬৩১) চালান, যা সাধারণ সরকারি কর্মচারীর সাধ্যের বাইরে। এছাড়া ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় ৩-৪টি জমি ও একটি ফ্ল্যাট কেনার তথ্যও পাওয়া গেছে।

 

অফিসের অনেকেই বলেন, “সরকারি বরাদ্দের টাকা তিনি বিভিন্ন উপায়ে আত্মসাৎ করেন। বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে মালামাল কেনার বিল তৈরি করে পার্থক্যের টাকা নিজের পকেটে নেন। প্রতি বরাদ্দেই কিছু না কিছু কাটছাঁট হয়।”

 

রাজনীতি ও ক্ষমতার মিশ্র প্রভাব:

সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে রাজনীতি করা আইনত দণ্ডনীয় হলেও গিয়াস উদ্দিন বছর বছর রাজনৈতিক দল বদল করে নিজের অবস্থান শক্ত করেছেন। বরিশাল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার পর বর্তমানে বিএনপি ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়লেও, অফিসে এখনও ‘লীগের প্রভাব’ দেখিয়ে কাজ করান।

 

এক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “তিনি একদিকে বিএনপির সাথে যোগাযোগ রাখেন, আবার প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করেন। এই দ্বৈত রাজনীতির কারণে প্রশাসনও বিভ্রান্ত।”

 

প্রশাসনের নীরবতা ও তদন্তের দাবি:

দপ্তরের স্বাভাবিক কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। গিয়াস উদ্দিনের দাপটে অফিসে ন্যায্যতা বা নিয়ম-কানুনের কোনো জায়গা নেই। ফলে সরকারি অর্থ অপচয় হচ্ছে, এবং নাগরিকদের জন্য নির্ধারিত সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।

 

একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে দপ্তরের কাজ পুরোপুরি অচল হয়ে পড়বে। প্রয়োজন প্রশাসনিক তদন্ত এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা।”

 

ঢাকা মশক নিবারণ দপ্তর, যার দায়িত্ব নগরবাসীকে রোগবাহী মশার হাত থেকে বাঁচানো আজ নিজেই এক অদৃশ্য দুর্নীতির জালে আটকে আছে। আর সেই জালের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন স্টোর কিপার গিয়াস উদ্দিন যিনি সরকারি চাকরির শপথ ভুলে রাজনীতি, টাকার কারবার এবং ব্যক্তিগত ক্ষমতার খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।